নবীগঞ্জ, (হবিগঞ্জ) ২২ নভেম্বর : প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর তফশীল ঘোষণার পর পরই জমে উঠেছে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের নির্বাচনী মাঠ। সরকার দলীয় সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন।
গতকাল সোমবার দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৮ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এবং কেউ কেউ ফরম জমাও দিয়ে দিয়েছেন। মোট ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে নিয়ে নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলাসহ পুরো জেলায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজীর বিরুদ্ধে এবার আরো ৭ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও ৫ চৌধুরীকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এর মধ্যে ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী, এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, আব্দুল মুকিত চৌধুরী ও ডাঃ নাজরা চৌধুরীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ এক দেওয়ানের বিরুদ্ধে ৫ চৌধুরীর লড়াই বেশ জমে উঠেছে। কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন এ নিয়ে নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার সর্বত্র চলছে ব্যাপক আলোচনা।
দলীয় ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৩৯ নং আসন হচ্ছে হবিগঞ্জ-১ আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার হচ্ছেন ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫২ ভোট। এর মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলার ভোটার হচ্ছেন ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৯৬৯ জন এবং বাহুবল উপজেলার ভোটার হচ্ছেন ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ০৯৩ জন। নবীগঞ্জে ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় মোট ১১৬টি কেন্দ্র এবং বাহুবল উপজেলায় ০৭টি ইউনিয়নে ৬১ টি কেন্দ্র রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকার আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন দেওয়ান শাহনেওয়াজ গাজী মিলাদ। তার সাথে প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন গণফোরামের নেতা ড. রেজা কিবরিয়া, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার বিশিষ্ট শিল্পপতি আতিকুর রহমান, বাসদের চৌধুরী ফয়সল শোয়েব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নুরুল হক ও ইসলামী ফ্রন্টের জুবায়ের আহমদ। তবে এবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাঠে না থাকায় আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের নিয়েই চলছে আলোচনা।
বর্তমান সংসদ সদস্য শাহনেওয়াজ গাজীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি কিংম্বা বড় ধরনের কোন অভিযোগ না থাকলেও দলীয় কোন্দল থাকায় কিছুটা বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। তার সাথে এবার যে ৫ চৌধুরী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী। তিনি বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি ২০১০ইং সালে অনুষ্টিতব্য উপ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়ার সাথে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
তারপর রয়েছেন আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। তিনি সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। তিনি বিগত ৫ বছর ধরে নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার মাঠে সরব ছিলেন। তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে ব্যাপক। দলীয় কোন বড় পদ না থাকলেও তার জনপ্রিয়তা তার মনোনয়ন পেতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে ধারনা তার সমর্থকদের।
আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। তার ভাই নিউইয়ার্ক আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তার ভাইয়ের আওয়ামীলীগের উচ্চ পর্যায়ে বড় লবিং রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের সমর্থন রয়েছে তার সাথে।
আব্দুল মুকিত চৌধুরী কেন্দ্রীয় যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন। তারও রয়েছে উচ্চ পর্যায়ে লবিং। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডাঃ নাজরা চৌধুরী হচ্ছেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা ইছমত আহমেদ চৌধুরীর কন্যা। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছেন। দেওয়ান শাহনেওয়াজ গাজী ছাড়া ৭ জনের মধ্যে ৫ চৌধুরী ছাড়া অপর দুজন নির্বাচনী মাঠে নবীন এবং কম পরিচিত। এডভোকেট মাজু মিয়া আইন পেশায় ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি ডেপুটি এর্টনী জেনারেল পদে নিয়জিত আছেন ও অপরজন ছাত্র জীবনে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করেন। তিনি হচ্ছেন শেখ জামাল হোসেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তিনি অনলাইনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
মোট ৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও মূল আলোচনায় রয়েছেন ৬ জন। তারা হচ্ছেন দেওয়ান শাহনেওয়াজ গাজী মিলাদ, ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী, এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, আব্দুল মুকিত চৌধুরী ও ডাঃ নাজরা চৌধুরী। এই ৬ জনের মধ্যে কে হচ্ছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকারী দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী এ নিয়ে নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার সর্বত্র চলছে ব্যাপক আলোচনা। তবে এই ৬ জনের ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব অবগত আছেন এবং তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত হবে কে হবেন হবিগঞ্জ-১( নবীগঞ্জ বাহুবল) আসনের দলীয় প্রার্থী।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan